দেশ ও মানুষের কথা বলে

[vc_row][vc_column]

[/vc_column][/vc_row]

“ফিরে এসো”

জানুয়ারী,২৮,২০২৩

“সুলেখা আক্তার শান্তা”

বাবা তোমার মুখে মা ডাক শুনে আমার বড় ভালো লাগছে। বাবা তাহলে তোমার সাথে আমি কিছু কথা বলতে চাই।
জ্বি মা বলুন।
বাবা তাহলে তো এখানে নয়, একটু আড়ালে।
তাহলে চলুন আমরা ঐ দিকটায় যাই। জ্বি এবার বলুন।
আমার মনে হয়, তুমি আমার ছেলে রবিনের যতগুলো প্রতিষ্ঠান আছে তার দলিলপত্রের কথা জানো। অন্য যে কয়েকজন
ম্যানেজার তার মধ্যে তুমি হেড। তোমার কাছে সবকিছুর দায় দায়িত্ব। সে দায় দায়িত্ব নিয়ে তুমি আমার সাথে কাজ
করবে। তোমার দ্বারা হবে সবকিছু আমার। তুমি বুঝতে পারছো আমি কি বলতে চাচ্ছি?
ফরহাদ মাথা নেড়ে না বলে।
লেয়া আবার বলে, তাহলে আমি তোমাকে খুলেই বলি। তুমি আর আমি যদি এক থাকি, তাহলে এই যে প্রতিষ্ঠান দেখছো
এর মালিক হবো তুমি আর আমি।
যে মালিক হয়ে আছে সে তো আপনার ছেলে। তবে তাকে রেখে আমাকে কেন মালিক করতে চাচ্ছেন?
এ তো তোমার বুদ্ধির অভাব। ছেলে বটে তবে ও আমার নিজের ছেলে নয়।
ফরহাদ এবার রেগে উঠল। আপনি সৎ মা, সৎ মা হয়েই রইলেন। যে নিজের স্বামীর সন্তানকে আপন করতে পারে না। সে
আমাকে আপন করবে কী করে?
আমি আপন পর বুঝি না। তুমি আমার সাথে এ কাজ করবে কিনা বলো। নয় তো আমি অন্য রাস্তা খুঁজে নিবো।
যান আপনি অন্য কাউকে দিয়ে করিয়ে নিন।
ঠিক আছে, আমি তোমার চোখের সামনে দিয়ে কাজগুলো করে যাবো।
আপনি ভয়ানক মহিলা বটে!
আমি তোমাকে যে কথাগুলো বললাম যদি মুখ বন্ধ না রাখো এর পরিণতি কী হবে তুমি তা জানো না। আমি আমার স্থানে
ঠিকই থাকব। শুধু সরে যাবে তুমি।
লেয়া চলে গেল। ফরহাদ নিজে নিজে বলতে লাগল, স্যার যাকে ঠাঁই দিয়েছেন সে তার জন্যে কী ফাঁদ পেতে রেখেছে তা
নিজেও জানেন না। যাকে আপনি আপন করে নিয়েছেন, এবার বুঝবেন আপন করে নেয়ার কী জ্বালা।

আনান এদিকে হাঁপিয়ে উঠেছে। কী করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। রেমা সুস্থ হবে এমন কোন লক্ষণই দেখছে না। শুরুতে
যেমন ছিল এখনো তেমন, কোন পরিবর্তন নেই। রেমাকে বলে, মারে এই পগলামী আমি আর কত দেখে যাবো, আমি যে
আর পারছি না। বাবার এ কাকুতির প্রতি কোন সহানুভূতি নেই রেমার। পাগল মানুষ কী বা সহানুভূতি দেখাবে। পাগলের
না আছে কোন বোধশক্তি। তাহানা অবস্থা বেগতিক দেখে একদিন আনানকে বলে, দুলাভাই আমি বলি কী আপনি একটা
বিয়ে করেন।
না না, একথা বলো না।
রেমার এ অবস্থা। ওর জন্য ডাক্তার, নার্স আর আমি আছি। ওর দেখাশোনা তো হচ্ছে।
আমি তো আমার ছেলেমেয়ে রেখে এসেছি। আমার তো ওদের কাছে যেতে হবে। আপনি বিয়ে করলে অন্তত আপনার
সংসারটাতো ঠিক থাকবে।
আমি জানি না, আমি কিছুই ভাবতে পারছি না। রেমা নিজের হাতের কাছে যাই পাচ্ছে, তাই নষ্ট করে দিচ্ছে।
আমি যা বলি আপনি তা শুনুন, ভালো হবে।
হাসপাতাল থেকে আনান বাসায় এলো। ভাবলো, ঠিকই তো। আমার সংসারটাতো অন্তত বাঁচাতে হবে। আনান বিয়ে
করার জন্য মন স্থির করে।

কয়েকদিন পর আনান বিয়ে করে। সংসার বেশ সুন্দরভাবে চলছে। এদিকে মেয়ে রেমার কোন খোঁজ নেয়া হয় না। নিজের
অফিস আর দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে বেশ ভালো সময় কাটছে তার। মেয়ে রেমা কী করছে, কী অবস্থায় আছে তার কোন
খোঁজ নেই। তার কথা একপ্রকার ভুলেই গেছেন।
তাহানা বাসায় এসে আনানকে বলে, দুলাভাই কী ব্যাপার আপনি রেমাকে দেখতে যান না যে? ওর ওখানের খরচও দিচ্ছেন
না।
আনান লজ্জা পেয়ে বলে, হ্যাঁ হ্যাঁ যাবো আমি।
তাহানা আনানের পাশে বসা মহিলাটি দেখে ঠিকই বুঝতে পারে যে তার দুলাভাইয়ের দ্বিতীয় স্ত্রী। তাহানা তার হাত ধরে
বলে, তুমি আমার আপা নিশ্চয়? আপা তুমি তোমার মেয়েকে দেখতে হাসপাতালে আসবে না?
এমন সময় আনান বলে উঠল— হ্যাঁ, আমি আশাকে নিয়ে যাবো।
আশা বলে উঠল, রেমা হচ্ছে পাগল। ওকে আমি কী দেখবো? ও কি আমাকে চিনতে পারবে? ওকে দেখেই বা লাভ কি
বলো? তাহানা তাজ্জব! কোন কথাই বলছে না, কথা শুনে মনের মধ্যে একটা কষ্ট পেল। বলে, ঠিক আছে দুলাভাই, আমি
যাই আপনি আসেন। যাবার সময় তাহানা হুঁহ শব্দ করে বিরক্তি প্রকাশ করে।
তাহানা হাসপাতালে এসে দেখল, রেমা ফ্লোরে একটি মানুষের ছবি আঁকছে। আজ একটু শান্ত মনে হলো রেমাকে। তাহানা
জিজ্ঞেস করলো, রেমা কার ছবি আঁকছিস মা?
উত্তর পেল না রেমার কাছ থেকে। তবে রেমা ইশারায় বোঝাল, এ আমার আপনজন।
কে সে বল আমাকে। রেমা হাতে বোঝাল, তারপর আর কোন কথাই নেই।

এদিকে লেয়া রবিনের সম্পদ আত্মসাতের যে জাল বিছিয়েছে ফরহাদ তাতে লোভে পড়ে যায়। শেষে লেয়া আর ফরহাদ
চক্রান্ত করে রবিনের ব্যাবসা বাণিজ্য তাদের নামে করে নেয়। রবিন যখন বুঝতে পারল চেনা জানা শত্রুকে সে আশ্রয়
দিয়েছে ততক্ষণে সর্বনাশ যা হওয়ার তা হয়েই গেল। মনে মনে বলে, এখন আমাকেই এ ভুলের মাশুল গুণতে হবে। সৎ মা
লেয়ার মুখে রস অন্তরে ছিল বিষ। সৎ মা মনভোলানো কথা দিয়ে ব্যাবসা বাণিজ্য এক এক করে তার নিজের নামে লিখে
নেয়। যখন রবিনের কাছ থেকে সৎ মা লেয়া স্বাক্ষর নেয় তখন দেখে না বা জানতেও চায় না স্বাক্ষরটি কী জন্য নিচ্ছে।
সৎ মার মধুভরা কথায় সে অন্ধ হয়ে যায়। রবিন যখন দেখলো নিজ নামের সব সম্পত্তি মা লেয়ার নামে হয়ে গেছে তখন
সে অবাক না হয়ে বলল, অন্ধ বিশ্বাসের ফল এমনই হয়। এরপর ভাতের সাথে বিষ দিয়ে লেয়া যখন খেতে দিল রবিনকে
তখন ঘরের কাজের লোক ইশারায় বুঝালো এ ভাতে বিষ আছে। রবিন তখন ভাত খেতে রাজি হলো না। লেয়া বলল,
বাবা ভাত কেন খাবি না? আমি নিজ হাতে তোর জন্য ভাত রান্না করেছি আর তুই বলছিস খাবি না।
আমি এখন খাবো না। এ ভাত আপনি খেয়ে নিন।
না বাবা আমি এখন খাবো না।
কেন ভাতে বিষ আছে বলে?
না তা হবে কেন?
যে ভাত আমার জন্য দিয়েছেন তা আপনি খেলে সমস্যা কী?
রায়হান এমন সময় কী হয়েছে কী হয়েছে বলে ঘরে ঢুকলো। শুনলো রবিন বলছে, তুমি তো আমার মা, এ ভাত প্লেট
তোমার গর্ভের ছেলে রোহানকে খেতে দাও।
রোহান যখন ভাতের প্লেট ধরলো লেয়া বলে উঠলো, না বাবা না তুই ঐ প্লেট ধরিস না!
কেন মা আমাকে না অনেক আদর করে খেতে দিয়েছিলে? তাহলে ওকে কেন দিচ্ছ না! ও তো তোমার নিজের ছেলে।
নিজের ছেলেকে বিষ খাওয়াতে পারবে না। আমি তোমার ছেলে না বলে আমাকে খাওয়াতে পারবে। আমার সাথে যা যা
করলে রোহানের ভবিষ্যতের জন্যে করেছো সেসব। সবকিছু দেখে রায়হান হিংস্র হয়ে ওঠে। রাগে ক্ষোভে সে পরনের বেল্ট
খুলে লেয়াকে পিটাতে লাগল। আর বলল, হারামী কাল সাপ, মানুষ আর হলে না।
রবিন বলল, বাবা কাল সাপ তো তুমি আমার ঘাড়ে এনে রেখেছ।
রোহান বলল, বাবা তুমি তার কথা শুনে আমার মাকে কেন পিটালে?

শুনিস না তোর মা কী করেছে?
হ্যাঁ হ্যাঁ  আমি ওকে মারতে চেয়েছি। আমি ওকে সহ্য করতে পারিনি আর পারবোও না কোনদিন।
তাহলে তুমি এখানে আসলে কেন?
আমি এখানে এসেছি কেন এখনো যদি না বোঝ তাহলে আমি বোঝাই কী করে।
রবিন হতবিহ্বল হয়ে বলে, আমি এসব কিছুই মনে করিনি। কারণ দুঃখের স্রোতে যাকে সাঁতার কাটতে হয় তার আবার
এসব নতুন কি? বাবা, শান্তির সুবাতাশ হারিয়েছে তো সেই কবেই, যেদিন তুমি আমার মাকে রেখে অন্যখানে বিয়ে
করেছো।
রায়হান বলল, বাবারে আমি তো পরিস্থিতির শিকার ছিলাম। কে জানত যে ও আমার সুখের বাগান তছনছ করে দিবে।
আমি নিজেও যে সুখী না বাবা। ভেঙ্গে দিয়েছে ও আমার আশা, ভরসা, স্বপ্ন।
রায়হান লেয়াকে বলল, তুমি এখান থেকে চলে যাও।
হ্যাঁ আমি চলে যাবো, আমার নামে যে সম্পদ আছে তা তোমার ছেলেকে বুঝিয়ে দিতে বলো।
মানুষ বটে! শেষ পর্যন্ত তুমি আমার ছেলেকে সর্বশান্ত করে দিলে? এই ছিল তোমার মনে? আমার এত সম্পদ পেয়েও
তোমার মনের আশা মিটেনি? যে ছেলে তার নিজ চেষ্টায় এই বিশাল সম্পদের মালিক হয়েছে আজ তাকে কোথায় নামিয়ে
দিলে?
রায়হান কেঁদে দেয়। তারপর রবিনকে বলে, বাবারে তোর বাপ হয়েছি ঠিকই, কিন্তু ছেলের জন্য কোন দায়িত্ব আমি পালন
করতে পারিনি।
বাবা, চলতে গিয়ে পথিক যদি তার দীর্ঘ পথের দিকে চেয়ে নিরাশ হয়ে বসে পড়ে তাহলে সে পথ অতিক্রম করা কখনোই
সম্ভব হয় না। দীর্ঘ পথ চলার ভয়ে অনেকেই আর অগ্রসর হয় না। আমি তেমনটি নই। কাঁটার ভয়ে পথ চলা বন্ধ করিনি
আমি।
আমাকে এ সমস্যা সমাধান করতে হবে?
তুমি কী সমাধান করবে? তোমার হাতে কিছুই করার নেই। বাবা যে সম্পদ ছিল আমার নামে, তা আজ নেই আমার
নামে। তা আমি আর কখনোই ফেরত চাই না।
রায়হান বলে, রবিন আজ তুই সবকিছু মুখ বুজে সহ্য করলি। আমি বলছি, একদিন তুই এ কাজের সুফল অবশ্যই লাভ
করবি।
ঝড়—ঝঞ্ঝা, দুঃখ কষ্ট দেখে যদি আমি পিছপা হতাম তাহলে সাফল্যের স্বর্ণমার্গে শিরোত্তোলন করা আমার পক্ষে কখনোই
সম্ভব হতো না।
বাবা তুমি এ নিয়ে মায়ের সাথে আর কথা বাড়িয়ো না।
একেবারে মায়ের মতো হয়েছিস, মা ছেলের একি মত। লেয়া বলল।
আমার ছেলেকে নিয়ে একটি কথাও বলবে না।
বাবা, তোমরা এখানে থাকো, আমি এখান থেকে চলে যাচ্ছি।
না বাবা তুই কোথায় যাবি?
কোথাও না কোথাও ঠাঁই হবেই। ঠিকানাবিহীন মানুষ কোথায় আবার যাবো?
যাক, এ বাড়িটি আমার নামে নিতে পারিনি, ও চলে যাচ্ছে যাক, ভালোই হলো।
রায়হান বলল, রবিন তোর এ বাড়িটি লেয়া নিতে পারেনি। তাহলে তুই কেন চলে যাচ্ছিস? তোর কী নিলো না নিলো
যাচাই করে দেখবি না? তোর কোন প্রতিহিংসা স্পৃহা জাগছে না মনে?
বাবা আমি দুঃখের তেজে হয়ে গেছি নির্বিকার, নিরহংকার।
তুই বাবা লেয়ার মুখের কথা বিশ্বাস না করে আগে কাগজপত্র খুলে দেখ। তোর সম্পদ তোর নামে কতটুকু আছে আর
কতটুকু নেই।
না না, আমি মুখে যা বলেছি বাস্তবেও তাই করেছি। এই দেখো তার দলিল প্রমাণ। আমি সত্য কথা বলছি, মিথ্যা আমি
বলিনি। আমি চললাম। লেয়া বলল।

ঠিক আছে তুমি যাও। রায়হান বলল লেয়াকে।
আমি তো তোমাকে এখানে রেখে একা যাবো না।
আমি খালি হাতে রবিনের কাছে থেকে যেতে চাই? তোমার তো সব আছে, আমার বিষয় সম্পত্তি সবকিছুই তো তোমাকে
দিয়ে দিয়েছি।
অনেক কিছুই তো নামে দাওনি, যেতে হলে তোমাকে আমিই নিয়ে যাবো।
ঠিক আছে, আমি তোমার সাথেই যাচ্ছি। তবুওতুমি শান্তিতে থাকো। লেয়ার সাথে চলে গেল রায়হান।
এরপর থেকে রবিন তার বাড়িতে একা একা থাকতে শুরু করলো। লেয়া এ বাড়ি থেকে চলে গিয়ে রবিনের
ব্যবসা—বাণিজ্য দখল করলো। রবিন অসহায়ের মতো পড়ে রইলো বাড়িতে।

www.bbcsangbad24.com

Leave A Reply

Your email address will not be published.