দেশ ও মানুষের কথা বলে

[vc_row][vc_column]

[/vc_column][/vc_row]

মুন্সীগঞ্জে কচুরিপানা-হোগলা পাতা দিয়ে তৈরি পণ্যতে গড়ে উঠেছে গ্রামীণ হস্তশিল্প

ফেব্রুয়ারী,০৭,২০২৩

বিবিসি সংবাদ ডেস্ক:

কচুরিপানা-হোগলা পাতা দিয়ে তৈরি পণ্য এখন রপ্তানি হচ্ছে বিশ্বের ৪৫ দেশে । গড়ে উঠেছে একটি গ্রামীণ শিল্পের ঐতিহ্য।
হাতে তৈরী এই শিল্প কারখানায় কর্মসংস্থান হয়েছে ১১৫ পরিবারের।

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় কচুরিপানা-হোগলা পাতা দিয়ে তৈরি পণ্য রপ্তানি হচ্ছে বিশ্বের ৪৫টি দেশে। উপজেলার নয়ানগর গ্রামের বাসিন্দা মো. আহসান উল্লাহ ভূঁইয়া (৪০)। এসএসসি পাসের পর দীর্ঘ ১৩ বছর কর্মরত ছিলেন পোশাক শিল্প কারখানায়। পরে ২০১৪ সালে ৪৫ হাজার টাকা বেতনের চাকরি ছেড়ে, মাত্র ৫ লাখ টাকা দিয়ে শুরু করেন হোগলা পাতা, খেজুর পাতা, কচুরিপানা, সন্ধ্যা পাতা, কলাপাতা, খড়, পাটের আশেঁর মতো নানা দেশীয় উপকরণ দিয়ে হাতে তৈরি পণ্যের ব্যবসা।

বর্তমানে তার ব্যবসায় পুঁজি হয়েছে প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ লাখ টাকা। তার ব্যবসায় নিজের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি কর্মসংস্থান হয়েছে নিজ গ্রাম ছাড়াও উপজেলার সোলআনি, ফুলদি, চরকিশোরগঞ্জ গ্রামের ১১৫ পরিবারের।

শুধু মুন্সীগঞ্জ জেলা নয়, আহসান উল্লাহর সঙ্গে যশোর, বগুড়া, বরিশাল, গাজীপুর ও নোয়াখালী জেলার কয়েকশ পরিবার এ কাজ করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করছেন।

সরেজমিনে জানা গেছে, আহসান উল্লাহর কারখানায় হোগলা পাতা দিয়ে তৈরি হচ্ছে ফল ঝুড়ি, ফুল ঝুড়ি, চামচ রাখার ঝুড়ি, টেবিল রানার, ব্যাগসহ বিভিন্ন পণ্য। এটি গ্রামীণ শিল্পের একটি ঐতিহ্য। নারী-পুরুষদের হাত দিয়ে তৈরি এই পণ্যগুলো বিশ্বের ৪৫ দেশে রপ্তানি হচ্ছে। দেশের গণ্ডি পার হয়ে হোগলা পাতার তৈরি উচ্চমানের হস্তশিল্প ও আসবাপত্র যাচ্ছে আমেরিকা, লন্ডন, রাশিয়া, চীন, জাপান, ইতালি, সিঙ্গাপুর, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে। যা দেশের গ্রামীণ শিল্পকে বিদেশে উপস্থাপন করছে। এ শিল্পটিকে ঘিরে রয়েছে এক উজ্জ্বল সম্ভাবনা। এ থেকে পরিবেশ সম্মত পণ্য উৎপাদন হওয়ায় এর চাহিদাও রয়েছে ব্যাপক।

সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা ও সরকারি সহযোগিতা পেলে শিল্পটিকে হাজার বছর ধরে টিকিয়ে রাখতে পারবে বলে আশা এ অঞ্চলের মানুষের। তবে প্রচারের অভাবে এটি তেমন বিকাশ লাভ করতে পারছে না। জেলা বিসিক দপ্তরে যোগাযোগ করেও এ শিল্পের সঠিক কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি।

গজারিয়া উপজেলার আহসান উল্লাহ প্রায় ৩ বছর ধরে নিজ গ্রামে বাড়ি ভাড়া নিয়ে মা-বাবা দোয়া নামে হস্তশিল্পের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তৈরি করেন। সে গত ২ বছর আগে গাজীপুর জেলায় একই নামে প্রতিষ্ঠান তৈরি করেন। নয়ানগর গ্রামে প্রথমে তিনজন প্রশিক্ষিত শ্রমিকের মাধ্যমে ৪০টি পরিবারকে প্রশিক্ষণ দেন মাত্র ৬ মাসে। তারপর শুরু করেন বিভিন্ন পণ্য তৈরি। পরে আস্তে আস্তে বিভিন্ন গ্রামে তার কার্যক্রম ছড়িয়ে পড়ে। এখন উপজেলার কাজীপুরা গ্রামে এ প্রশিক্ষণ চলছে ২০ পরিবারের মাঝে। এগুলো তৈরির কাঁচামাল দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে বরিশাল, যশোর, নোয়াখালী ও বগুড়া উল্লেখযোগ্য।

উপজেলার নয়ানগর গ্রামের দিলরুবা বেগম (৪২) বলেন, আমরা গত ৩ বছর ধরে এ কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছি। পরিবারের কাজ করে মাসে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা উপার্জন করতে পারি। এতে পরিবারের বাড়তি ইনকাম হয়।

মো. আহসান উল্লাহর সাথে আলাপকালে বলেন,আমার ছোটবেলা থেকেই নিজে কিছু করার স্বপ্ন ছিল। এসএসসি পাশ করার পর আর লেখাপড়া করা হয়নি। পরে পোশাক তৈরি কারখানায় চাকরি করতে থাকি। ২০১৪ সালে চাকরি ছেড়ে মামার সহায়তায় ঢাকার মোহাম্মদপুর একটি হস্ত শিল্প তৈরির প্রতিষ্ঠানে চাকরি শুরু করি। তারপর প্রথমে গাজীপুর কারখানা তৈরি করি। কিন্তু আমার গ্রামের মানুষকে নিয়ে কাজ করার স্বপ্ন ছিল। তার প্রেক্ষিতে ২০২০ সালে প্রথমে নিজ গ্রামে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কাজ শুরু করি।

আহসান উল্লাহ আরও বলেন, বাবা-মায়ের সহায়তায় এখানে মা-বাবার দোয়া নামে হস্তশিল্প নামে প্রতিষ্ঠান দেই। আমার এখানে এখন ২০ থেকে ২৫ ধরনের পণ্য তৈরি হয়। এখানকার তৈরি পণ্য বিশ্বের ৪৫ দেশে রপ্তানি হয়। আমেরিকা, ইউরোপ এবং এশিয়া বিভিন্ন দেশে। ইচ্ছে আছে সহায়তা পেলে জেলার বিভিন্ন উপজেলার মানুষকে সম্পৃক্ত করে কাজ করব।

মুন্সীগঞ্জ বিসিকের উপ-পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ বিবিসি সংবাদকে বলেন, এই জেলায় এমন কর্মজজ্ঞ চলছে আমাদের জানা ছিল না। যে
ব্যাক্তি এই ধরনের হস্তশিল্পের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছেন তাকে ধন্যবাদ জানাই। আমাদের যদি কোনো সহায়তার প্রয়োজন হয়, আমরা প্রস্তুত আছি। তার যদি আর্থিক লোনের প্রয়োজন হয়, আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে আমরা অবশ্যই দেব।

www.bbcsangbad24.com

Leave A Reply

Your email address will not be published.