ডিসেম্বর,০১,২০২২
আবু হানিফ রানা :
অবৈধ কুচিংয়ের ফি পরিশোধ না করায় পরিক্ষার প্রবেশ পত্র নিয়ে তালবাহনা করার অভিযোগ উঠেছে মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার বেতকা ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে। বাধ্য হয়ে অভিবাবকরা ধারদেনা করে ওই অবৈধ কোচিংয়ের টাকা পরিষোধ করছেন।
মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার বেতকা ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের ভিতরে বিগত ৪মাস যাবৎ প্রকাশ্যে কোচিং বানিজ্য করে আসছিল স্কুল কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। ওই স্কুলের ৬ষ্ঠ হতে ১০ম শ্রেনী পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন কৌশলে কোচিং করতে বাধ্য করছিল ওই স্কুলের শিক্ষকরা। সপ্তাহে ৩দিন করে দুই বিষয়ের উপর পড়িয়ে আদায় করা হচ্ছিল ৬ শত করে টাকা। কোচিং করানোর আগে অভিবাবকদের কাছ হতে নিয়ম অনুযায়ী সম্মতি নেওয়ার বিধান থাকলেও নেওয়া হয়নি কোন সম্মতি। এছাড়া অতিরিক্ত ক্লাস বাবদ প্রতি বিষয় পরিয়ে ১৫০টাকা করে অভিবাবকদের সম্মতিক্রমে নেওয়ার বিধান থাকলেও ওই বিদ্যালয়টি প্রতি বিষয়ের উপর ৩০০ শত করে টাকা নিচ্ছিল। পরে গত ২৮ নভেম্বর হতে ওই বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরিক্ষা শুরু হয়। কিন্তু গরীব অসহায় অনেক শিক্ষার্থী ওই অবৈধ কোচিংয়ের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় তাদের দেওয়া হচ্চেনা পরিক্ষা হলের প্রবেশ পত্র। এতে অভিবাবকদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে।
শিক্ষার্থী সূত্রে জানাযায়, কোচিংয়ের ফ্রি নিতে হলে রিসিড দিয়ে টাকা নেয়ার বিধান রয়েছে। আমাদের বিদ্যালয়ে এ নিয়ম মানা হয়নি। এখন শুনছি আমাদের কাছে কোচিং ফরম দেয়া হবে। তা পরিবার হতে সাক্ষর করে জমা দিতে হবে। এটা কেমন নিয়ম, নিয়ম ছিল কোচিং সম্মতি পত্রে আগে সাক্ষর করে পরে কোচিংয়ে নেয়া।
এ ব্যাপারে ওই বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী পিয়াঙ্কার মা স্বরস্বতী মন্ডল বলেন, আমার ৩ মেয়ে বিদ্যালয়ে পরে। তাদের বই খাতার খরচ যোগাইতেই আমাদের কষ্ট হয়। পরিক্ষার ফি দেওয়ার পরেও আমার মেয়ের প্রবেশ পত্র দেয় নাই । শিক্ষকরা বলে কোচিংয়ের টাকা না দিলে প্রবেশ পত্র দিবোনা । পরে আমি কোচিংয়ের টাকা ধারদেনা করে পরিশোধ করে স্কুল হতে প্রবেশ পত্র আনি।
এ ব্যাপারে ওই বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী অংকনের মা নাসিরন বেগম বলেন, বার্ষিক পরিক্ষার প্রবেশ পত্র আনার জন্য স্কুলে গেলে শিক্ষকরা বলছে কোচিংয়ের টাকা না দিলে প্রবেশ পত্র দিবো না। পরে বলে আমার মেয়ের এক মাসের কোচিংয়ের ৬ শত টাকা পায় । টাকা না দিলে প্রবেশ পত্র দিবো না পরে আমি কষ্ট করে ৬০০শত টাকার স্থলে ৫০০টাকা দিয়ে হাতে পায়ে ধরে প্রবেশ পত্র নেই।
৯ম শ্রেণীর অপর শিক্ষার্থী সুমাইয়ার মা রীণা বেগম বলেন, আমার স্বামী ডিম বিক্রি করে। মেয়ের স্কুল হতে এসে বলে স্যারেরা কোচিংয়ের টাকা পায় না দিলে পরিক্ষার প্রবেশ পত্র দিবো না । মেয়ে বলে কোচিংয়ের টাকা না দেওয়ায় স্যারের তাকে অপমান করছে। পরে আমি ২ হাজার টাকা ঋন করে কোচিংয়ের টাকা পরিশোধ করে প্রবেশ পত্র নিয়ে আসছি।
অপর অভিভাবক আরিফা বেগম বলেন, আমার দুই মেয়ে ৬ষ্ঠ ও ৮ ম শ্রেনীতে পরে। তাদের স্কুলের
স্যাররা দুইটা বিষয়ে পড়িয়ে মাসে ৬০০ করে টাকা নিচ্ছে। লোকজনকে তারা বলে তারা চার বিষয় পড়ায়। তারা মিথ্যা কথা বলছেন। যেমনে পারছেন টাকা আদায় করছেন। ওটা স্কুল নয় একটা কষাইখানা।
এদিকে বিদ্যালয়ের এক ছাত্রী জানান, মো. আরিফুর রহমান সবুজ স্যার ক্লাসে বলেছেন কোচিংয়ের টাকা পুরোপুরি পরিশোধ না করলে পরিক্ষার এডমিড কার্ড হবে না।
স্থাণীয় অভিবাবকরা আরো বলেন, কিছুদিন আগে এসএসসি পরিক্ষা গেল। পেকটিক্যাল পরিক্ষা নাম্বার বাড়িয়ে দিবে বলে, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৫০০ টাকা করে নিলো স্যার । কেউ প্রতিবাদও করলো। কিন্তু কোন লাভ হলোনা।
এ ব্যাপারে ওই বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক সেলিম হোসেন বলেন, আমরা ক্লাসে ওপেন ঘোষনা দিয়েছি তোমরা কোচিং করে যে পরিমান টাকা পারো দিও কেও না পারলে না দিও। কেউ ৬শত দিছে কেউ ৩ শত দিছে কেউ দেয়নাই। আমরা কাউকে টাকা পরিশোধের জন্য চাপ প্রয়োগ করিনাই। শুধুমাত্র শিক্ষার্ত্রীদের লেখাপড়ার মান ভালো হওয়ার জন্য কোচিং করিয়েছিলাম।
এ ব্যাপারে বেতকা ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মহিউদ্দিন আল মামুন বিবিসি সংবাদকে বলেন, আমরা টাকার জন্য কোন শিক্ষার্থীর প্রবেশ পত্র আটকিয়ে রাখিনি। স্কুলের সকল শিক্ষার্থীই পরিক্ষা দিচ্ছে। কেউ টাকা পরিশোধ করেই দিছে কেউ আবার টাকা পরিশোধ না করেই দিচ্ছে।এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা খালেদা পারভীন এর সাথে কথা বললে তিনি বিবিসি সংবাদকে বলেন, যদি ওই স্কুলে কোন অণিয়ম হয়ে থাকে তাহলে অভিবাবকরা আমার কাছে অভিযোগ করলে অবশ্যই আমি আইনগত ব্যবস্থা নিবো।
www.bbcsangbad24.com