দেশ ও মানুষের কথা বলে

[vc_row][vc_column]

[/vc_column][/vc_row]

মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনার মধ্য দিয়ে শেষ হলো বিশ্ব ইজতেমা

জানুয়ারী,২২,২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের কল্যাণ, দুনিয়া ও আখেরাতের শান্তি কামনায় আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে এ বছরের বিশ্ব ইজতেমা।

রোববার (২২ জানুয়ারি) বেলা ১২টার ১৫ মিনিটের দিকে আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন মাওলানা সাদ কান্ধলভীর বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ বিন সাদ কান্ধলভী। মোনাজাত শেষ হয় পৌনে ১টার দিকে।

৫৬তম এই ইজতেমায় আখেরি মোনাজাতের সময় ‘আমিন, আল্লাহুম্মা আমিন’ ধ্বনিতে তুরাগ তীর মুখরিত হয়ে ওঠে। সন্তুষ্টি লাভের আশায় লাখো মানুষ আল্লাহর কাছে আর্জি জানান। অনেকে কেঁদে কেঁদে মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান। বিশ্ব শান্তির জন্য দোয়া করেন।

শনিবার (২১ জানুয়ারি) সকাল থেকেই আখেরি মোনাজাতের কারণে ইজতেমা মাঠের আশপাশের সড়কের যান চলাচল নিয়ন্ত্রিত ছিল। যারা ইজতেমার ময়দানে পৌঁছাতে পারেননি তারা পথে-ঘাটে, বাস, রিকশা, আশপাশের মসজিদ, দোকান-পাটে বসেও মোনাজাতে অংশ নিয়েছেন। ফেসবুক লাইভ, এফএম রেডিও, হ্যান্ড মাইক, মসজিদের বড় মাইক ও অনলাইনের মাধ্যমে ইজতেমার আখেরি মোনাজাতে অংশ নিয়েছেন।

আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে উত্তরা, টঙ্গী, গাজীপুরসহ আশপাশের এলাকার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কল-কারখানা, মার্কেট, বিপণি-বিতান, অফিসসহ সব কিছু বন্ধ ছিল।

রোববার ফজরের পর বয়ান দিয়ে শুরু হয় ইজতেমার শেষ দিনের কার্যক্রম। ফজরবাদ বয়ান করেন ভারতের মাওলানা মুরসালিন, তার বয়ান তর্জমা করে শোনান বাংলাদেশের মাওলানা আশরাফুল। এরপরে বিরতি দিয়ে ৯টা থেকে মাওলানা মোশাররফ তালিমের বয়ান করেন। সাড়ে ৯টা থেকে শুরু হয় হেদায়েতি বয়ান। উর্দূতে এই বয়ান করেন ভারতের বিভিন্ন মুরুব্বিরা, হেদায়তি বয়ানের পর শুরু হয় আখেরি মোনাজাত।

মহামারি করোনায় ২ বছর বন্ধ থাকলেও প্রতিবছর বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নেয় কয়েক লাখ মানুষ। তাদের মধ্যে তাবলিগ জামাতের বিদেশি মেহমানও থাকেন ৩০ থেকে ৪০ হাজার। তাবলিগ জামাতের নিয়মিত অনুসারী নন, এমন অনেকেই বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাতে শামিল থাকতে চান।

গত শুক্রবার (২০ জানুয়ারি) আম বয়ানের মধ্য দিয়ে এবারের বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয়। এই পর্বে অংশ নেন দিল্লির মাওলানা সা’দ কান্ধলভীর অনুসারীরা।

এর বাইরে শুধু আখেরি মোনাজাতে শরিক হতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ আসতে থাকে শনিবার থেকেই। বাস, ট্রাক, কার, মাইক্রোবাস, ট্রেন, লঞ্চে করে এসে টঙ্গীতে পৌঁছে অবস্থান নিতে শুরু করেন।

রাজধানীসহ আশপাশের এলাকার লোকজন শীত আর কুয়াশা উপেক্ষা করে রাতেই টঙ্গীমুখো হন। মধ্যরাত থেকে টঙ্গীমুখী সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় ১৫ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটেও ইজতেমা মাঠে পৌঁছেছেন অনেকে।

ইজতেমার মাঠে যাদের জায়গা হয়নি, আশপাশের বাসাবাড়ি, ভবন, ভবনের ছাদ কিংবা করিডোর, সড়কের পাশে ফুটপাতে এমনকি গাছতলায় বসে তারা মোনাজাতে হাত তুলেছেন।

বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের মিডিয়া সমন্বয়ক মোহাম্মদ আবু সায়েম বলেন, রোববার সকাল পর্যন্ত আরব, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, মালয়েশিয়া, ফিলিপিন্স ৬২টি বিভিন্ন দেশ থেকে ৭ হাজার ৯২১জন বিদেশি মেহমান বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দিয়েছেন।

মূল ইজতেমা ময়দানে নারীদের বসার কোনো ব্যবস্থা নেই। সে কারণে ময়দানের বাইরে খালি জায়গায়, কলকারখানা ও বসত বাড়ির ছাদসহ বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে আখেরি মোনাজাতে অংশ নেন বহু নারী।

ইজতেমায় মৃত্যু:

এ বছর বিশ্ব ইজতায় মোট ১৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১ম পর্বে ৭ জন ও ২য় পর্বে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের অনেই বার্ধক্যজনিত কারনে মৃত্যুবরণ করেছে। মৃত্যুদের জানাজা নামাজ ময়দানেই অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে তাদের বাড়ি নেয়া হয়।

ইজতেমা মাঠসহ আশপাশে ও আখেরি মোনাজাতকে ঘিরে ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নিরাপত্তা। র‍্যাব, পুলিশ, আনসার ব্যাটালিয়ন, গোয়েন্দা পুলিশসহ (ডিবি) বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব পালন করেন। মোড়ে মোড়ে সিসিটিভি ক্যামেরা ও র‍্যাবের হেলিকপ্টার দিয়ে টহল দেয়া হয় ইজতেমার ময়দানসহ আশপাশের এলাকায়।

বাড়ি ফিরতে ভোগান্তি:

মোনাজাতের পরপরই নিজ গন্তব্যে ফেরার জন্য রওয়ানা হন মুসুল্লিরা। ফলে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, টঙ্গী-পুবাইল, টঙ্গী-বনমালা আঞ্চলিক সড়ক, টঙ্গী-আব্দুল্লাহ্পুর সড়ক ও কামারপাড়া-আশুলিয়া সড়কে জনস্রোতের সৃষ্টি হয়। টঙ্গী রেল স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, ঘরমুখো মানুষের ভিড়। ট্রেনের ইঞ্জিন রুমসহ ছাদের উপরেও ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি ফেরেন তারা। অনেকেই ফেরার সময় কোনো গাড়ি না পেয়ে পায়ে হেঁটেই রওনা দিয়েছি। এতে কষ্ট হলেও লাখো মুসল্লির সঙ্গে নিজেকে উপস্থাপন করতে পেরে ভাল লাগছে এমনটাই জানালেন বরিশাল থেকে আসা আব্দুস সালাম।

এর আগে কাকরাইলের মাওলানা জোবায়েরের অনুসারীরা ১৩-১৫ জানুয়ারি প্রথম পর্বে ইজতেমায় অংশ নেন। ১৫ জানুয়ারি রোববার কাকরাইল মসজিদের ইমাম মাওলানা জুবায়েরুল ইসলামের পরিচালনায় ইজতেমার ১ম পর্বের মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। আর রোববার মাওলানা সা’দ এর অনুসারীদের অংশগ্রহণে দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হল তাবলিগ জামাতের এই বিশ্ব সম্মেলন।

এর আগে এক মঞ্চ থেকেই একবারই বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন হলেও ভারতের মাওলানা সাদ নিজেকে তাবলীগ জামাতের একক মুরুব্বি ঘোষণা করলে শুরু হয় বিতর্ক। মাওলানা জোবায়ের এবং মাওলানা সা’দ পক্ষের অনুসারীরা এ নিয়ে নিজেদের মধ্যে বিভেদে তৈরি হওয়া পর থেকেই দুই পক্ষ বিশ্ব ইজতেমা দুইবারে করার সিদ্ধান্ত নেয়। জুবায়ের পন্থীদের বিরোধিতার কারনে মাওলানা সাদ বাংলাদেশে না আসলেও তার তিন ছেলে ছিলেন ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের শুরু থেকেই।

www.bbcsangbad24.com

Leave A Reply

Your email address will not be published.