মার্চ ,০১,২০২৪
“নাজনীন নাহার ”
যখন মানুষগুলো পুড়ে মারা যায়। যখন মানুষগুলো তাদের পোড়া শরীর নিয়ে মৃত্যু যন্ত্রনায় কাতরায়। যখন লঞ্চডুবিতে অজস্র মানুষ মারা যায়। যখন রোড এক্সিডেন্ট, রেল এক্সিডেন্ট, বিল্ডিং ধ্বসে মানুষগুলো অসহায়ের মতো মারা যায়। মানুষগুলো যখন পিঁপড়ার দলের মতো বোমা হামলায় ও যুদ্ধে মারা যায়। তখন আমার কেবল মন খারাপেই দহন থেমে থাকে না। তখন আমার আত্মায় খুব কষ্ট হয়। আমার শ্বাসকষ্ট হয়। আমি একা একাই খুব কান্না করি। আমার অন্তর আত্মা জ্বলেপুড়ে খাক হয়ে যেতে থাকে।
আমি তখন সকল মৃতের স্বজন হয়ে যাই। মৃতদের সন্তান, মা, বাবা, স্ত্রী, স্বামী, ভাই-বোন ও বন্ধু হয়ে যাই। আমার তখন মানুষের জন্য নির্ধারিত জন্ম, মৃত্যু, দুনিয়া, আখেরাত, প্রকৃতি, গাফলতি, আল্লাহ, ঈশ্বর, ভগবান, রহস্য, শক্তি, অসহায়ত্ব, জীবন, দহন, দায়িত্ব, দুর্নীতি ইত্যাদি সব সবকিছু কেমন একাকার হয়ে যায়। আমি মানুষ হিসেবে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি অসহায় হয়ে যাই।
আমার এমন সময়গুলো ভীষণ দুর্বিসহ লাগে। আমি এ ভয়ঙ্কর দৃশ্যগুলো দেখতে পারি না। শুনতে পারি না পৃথিবীর মানুষের করুণ আর্তি। আমি কেমন নিস্প্রভ হয়ে যেতে থাকি। আমার খেতে ভালো লাগে না। আমার ঘুমাতে ইচ্ছে করে না। একটা অস্থীর ঘোরের মধ্যে দিয়ে যায় আমার কিছু সময়। সবকিছু অর্থহীন মনে হয়। আমি যে মানুষ।
এরপর সময় আমাকে জীবনের নিয়মে বেঁধে টানতে থাকে জীবনের নিয়মে। আমি একটু একটু করে জীবনে ফিরে আসি। আমি পুনরায় প্রার্থনায় নিমগ্ন হই। আমি পুনরায় শোকর গোঁজার করি। আমি পৃথিবীর মানুষের জন্য দোয়া করি। আমি আমার নৈমিত্তিক কাজে ডুবতে থাকি। আমি আমার সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন অতিবাহিত করতে থাকি। আমি একসময় নিজের মতো করে খুশি থাকি। আমার মতো প্রায় সকলেই তাই থাকে।
যার যায় সে কেবল বোঝে।
যার যায় তার আর ফিরে আসে না। যার যায় তার আর ইহজীবনটা পুরোপুরি স্বাভাবিক হয় না। যার যায় তার আর পরিতৃপ্তি নিয়ে রাতের ঘুম আসে না। যার যায় সে নিশ্চিত বেঁচে থাকে ঠিক কিন্তু এই সকল ক্ষত একজীবনে আর সারে না তার।
আহা জীবন!
তুমি কখন কোথায় কেমন করে নিঃশেষ হয়ে যাও,
তুমি দুঃখ খেয়ে, দহন খেয়ে সুখ কুড়িয়ে নাও।
তুমি হাসো-কাঁদো, স্বপ্ন সাজাও তোমার তরে কত,
নিয়তি নামের বিধান তোমায় পোড়ায় অবিরত!
তবুও তুমি উঠে দাঁড়াও তবুও বাঁচো বেশ,
ও জীবন তোমার ক্ষত জুড়ে থাকে যে ব্যথার রেশ!
আহা জীবন!
www.bbcsangbad24.com