অক্টোবর ৯, ২০২৪
নিজস্ব প্রতিবেদক
পূজার আনন্দ মিস কেরতে চায়না কেউ। ক্ষণে ক্ষণে উলুধ্বনি, শঙ্খ, কাঁসর আর ঢাকের বাদ্যি জানান দিচ্ছে, ঠাকুরঘরে উদ্ভাসিত মৃন্ময়ী রূপ প্রতিমা বরণ। চিন্ময়ী আনন্দরূপিণীর বোধন হয়েছে গতকাল। শুরু হয়েছে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রাণের উত্সব, শারদীয় দুর্গোৎসবের।
আজ বুধবার মহাষষ্ঠী। পূর্বাহ্ণ ৮.০১-এর মধ্যে ষষ্টাদি কল্পারম্ভ ও ষষ্টীবিহিত পূজা।
সায়ংকালে দেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাস। আগামীকাল মহাসপ্তমী। মহাসপ্তমীর প্রভাতে ঢাক-ঢোলক-কাঁসর বাজিয়ে কলাবউ স্নান ও আদরিণী উমার সপরিবারে তিথি বিহিতপূজা। মহাসপ্তমীতে ষোড়শ উপচারে অর্থাৎ ১৬টি উপাদানে দেবীর পূজা হবে।
সকালে ত্রিনয়নী দেবী দুর্গার চক্ষুদান করা হবে। দেবীকে আসন, বস্ত্র, নৈবেদ্য, স্নানীয়, পুষ্পমাল্য, চন্দন, ধূপ ও দীপ দিয়ে পূজা করবেন ভক্তরা। সপ্তমীপূজা উপলক্ষে সন্ধ্যায় বিভিন্ন পূজামণ্ডপে ভক্তিমূলক সংগীত, রামায়ণ পালা, আরতিসহ নানা অনুষ্ঠান হবে। বাঙালি হিন্দু বিশ্বাসে, কৈলাসশিখর ছেড়ে পিতৃগৃহে আসা দুর্গার অকালবোধন হয়েছে। শিল্পী তার তুলির নিপুণ আঁচড়ে বর্ণাঢ্য বিভায় উদ্ভাসিত করে তুলেছে মহিষাসুর-মর্দিনীকে। কুমারটুলি থেকে প্রতিমার অধিষ্ঠান হয়েছে মণ্ডপে। বোধনে খুলে গেছে তার আয়ত চোখের পলক। অসুরবধে চক্র, গদা, তির, ধনুক, খড়গ-কৃপাণ-ত্রিশূল হাতে মাতৃরূপেণ দেবী হেসে উঠেছেন। ধূপের ধোঁয়ায় আজ সায়ংকালে ঢাক-ঢোলক-কাঁসর-মন্দিরার চারদিক কাঁপানো নিনাদ আর পুরোহিতদের জলদকণ্ঠে :‘যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেণ সংস্থিতা, নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ’ মন্ত্রোচ্চারণের ভেতর দূর কৈলাস ছেড়ে দুর্গা পিতৃগৃহে আসবেন দোলায় বা পালকিতে।
হিন্দুরা মনে করেন, পালকি বা দোলায় দেবীর আগমন বা গমন হলে ফলাফল হয় মড়ক। দেবী গমন করবেন ঘোটকে বা ঘোড়ায়। বিশুদ্ধ হিন্দু পঞ্জিকামতে, ফল—‘ছত্রভঙ্গস্তুরঙ্গমে’। অর্থাৎ ঘোটকে গমনে সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংসারিক ক্ষেত্রে অস্থিরতা প্রকাশ পাবে। ‘সুদর্শন’ পঞ্জিকা মতে, বিজয়া দশমীতে এয়োস্ত্রীদের দেবীবরণ ও সিঁদুর খেলার পর বিদায় নেবেন আবারও ঘোটকে।
রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দিরের মোড় থেকে মন্দির প্রাঙ্গণের দিকে এগিয়ে যেতে চোখে পড়ছে লাল-নীল আলোর চোখ ধাঁধানো খেলা। মন্দিরের প্রবেশ তোরণ থেকে মন্দির জুড়েই বর্ণিল আলোকের রূপবিন্যাস।
বিশুদ্ধ পঞ্জিকা মতে, গতকাল সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিট ৩৫ সেকেন্ডের পর ষষ্ঠী তিথির সূচনা ঘটে। আজ রাত ৮টা ২৩ মিনিট ৪৫ সেকেন্ড অব্দি তিথি থাকবে। অতঃপর শুরু হবে মহাসপ্তমী তিথি। কাল মহাসপ্তমীর প্রভাতে ঢাক-ঢোলক-কাঁসর বাজিয়ে কলাবউ স্নান ও আদরিণী উমার সপরিবারে তিথি বিহিতপূজা।সাধারণত আশ্বিন শুক্লপক্ষের ষষ্ঠ দিন অর্থাৎ ষষ্ঠী থেকে দশম দিন অর্থাৎ দশমী অবধি পাঁচ দিন দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এই পাঁচটি দিন যথাক্রমে দুর্গাষষ্ঠী, মহাসপ্তমী, মহাষ্টমী, মহানবমী ও বিজয়া দশমী নামে পরিচিত। আবার সমগ্র পক্ষটি দেবীপক্ষ। দেবীপক্ষের সূচনা হয় পূর্ববর্তী অমাবস্যার দিন; এই দিনটি মহালয়া।
অন্যদিকে দেবীপক্ষের সমাপ্তি পঞ্চদশ দিন পূর্ণিমায়; এই দিনটি কোজাগরী পূর্ণিমা নামে পরিচিত ও বার্ষিক লক্ষ্মীপূজার দিন। দুর্গাপূজা মূলত পাঁচ দিনের অনুষ্ঠান হলেও মহালয়া থেকেই প্রকৃত উৎসবের সূচনা ও কোজাগরি লক্ষ্মীপূজায় তার সমাপ্তি।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর দেশের ৩১ হাজার ৪৬১টি মন্দির ও মণ্ডপ এবার পূজা হবে। গত বছর এই সংখ্যা ছিল ৩২ হাজার ৪০৮টি।
থিমভিত্তিক প্রতিমার প্রবণতা: এদিকে ভারতের কালকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গের মতে বাংলাদেশেও থিম বা নির্দিষ্ট বিষয়ভিত্তিক মণ্ডপ ও প্রতিমা নির্মাণের প্রবণতা বেড়েছে। নিত্যনতুন থিম ও প্রতিমায় অভিনবত্বের পাশাপাশি থাকছে ঐতিহ্যের ভিন্নতা। কোনো কোনো মণ্ডপে প্রাচীন রোমান দেব-দেবী ধাঁচের প্রতিমা বানানো হয়েছে।
পদ্মফুলের ওপর প্রতিমা, গহিন অরণ্যে দুর্গা, মহাপ্রলয়ের মাঝখানে, বরফের পাহাড়ে শ্বেতশুভ্র বসনে, বৃক্ষের মধ্যে, এমনকি দুর্গাকে মহাকাশে তার দেহভঙ্গিমায় সুললিত ভাবের বদলে রোবটিক চেহারায় থিম গড়া হয়েছে। তবে এগুলোর নির্মাণ নির্ভর করেছে আর্থিক সংগতির ওপর। যে মণ্ডপ কমিটির যত অর্থের সংস্থান তারা তত জৌলুস এনেছে প্রতিমায়।
www.bbcsangbad24.com