নভেম্বর,০২,২০২৪
“নাজনীন নাহার”
আমদের অধিকাংশ তথাকথিত সুস্থ মানুষের ঘুম ভাঙ্গে কেবল পেটের ক্ষুধা, বিলাসিতার ক্ষুধা, ভোগের ক্ষুধা নিয়ে কিংবা মলমূত্রাদি ত্যাগের নিমিত্তে। জাগতিক কিছু অভিতাপের পাণ্ডুলিপিতে আমরা অন্তর্ভুক্ত করি আমাদের কী আছে কী নেই এর তৃষালু হিসেব নিকেশ। এইরকম অজস্র অস্থির বিতণ্ডায় ব্যতিব্যস্ত আমাদের অধিকাংশ জীবন।
আমাদের অধিকাংশ মানুষের মস্তিষ্ক মূলত অর্থহীন চাকচিক্য ছাপিয়ে জীবন বোঝে না। আমরা ঠিকঠাক বুঝি না জন্ম ও মৃত্যুর রহস্য ঘোর! আমাদের নিত্যকার ভাতের প্লেটে আরও দুই টুকরা মাংস কিংবা বাড়তি সালুনের চাহিদার সাথে শরীরের গোশত উপভোগের নেশাটা ভোগের পাত্রে ঢেলে পান করতে করতে জীবন এবং রোমান্সকে নেহায়েত অভ্যাস বানিয়ে ফেলি। প্রকৃত জীবন বলতে এরকম বিবিধ মাছ, মাংস, ভাত, রুটির ঢেকুর তোলা জীবন বুঝি!
আসলে ভোগটাই হয়ে ওঠে আমাদের জীবনের একমাত্র উদ্দেশ। নব্য ফ্যাসিবাদের আদলে যেখানে আমিত্ববাদের তীব্র নেশার আসক্তিই মূলত গুমনামের জীবন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত! তাইতো আমরা অধিকাংশরা কাফকা পড়ি না। পড়ি না ম্যাকিয়াভেলি কিংবা আরজআলী মাতুব্বর! ঠিকঠাক পড়ি না পরিশুদ্ধ ও পরিপূর্ণ জীবন পরিচালনার বিধান সমৃদ্ধ পবিত্র কোরআন। যারাওবা পাতা উল্টিয়ে পড়ে নেই কিছু শক্তি চট্টপাধ্যায় কিংবা আর্তুর র্যাবো তাদের অধিকাংশই ঠিকঠাক বুঝি না এর শব্দ, অর্থ এবং বোধ! বোধে বাঁধি না এর নিগূঢ় মাহাত্ম্য! মুখস্থ বিদ্যার মতো সময়ের খাতায় লাইন বাই লাইন না বুঝে লিখে যাই জীবন এবং জীবনের অধ্যায়গুলো!
বোকা কিংবা চতুরের বোধগুলো কেবল স্বার্থ বোঝে আর বোঝে ভোগ। জীবনের অর্থ সমান সমান ভোগ লিখে দিয়ে লোভের দৌরাত্ম্যে দৌড়াই আমরা!
কিয়দংশ যারা প্রকৃত অর্থে জীবন বুঝতে যাই,
তাদের অধিকাংশের মাথাটা আবার পুরাই এলোমেলো করে দেয় সৃষ্টির রহস্য এবং দহনের সুতীব্র আত্মবিশ্বাস!
তারচেয়ে এই-ই ভালো;
আমরা আমাদের যে যার মতো কিংবা গরু-ছাগলের মতো খাই-দাই, ঘুমাই আর জেগে উঠি পুনরায় আমাদের খাওয়া-দাওয়া, ঘুম এবং তথাকথিত ভোগের নিমিত্তে।
এছাড়াও আমরা মনুষ্য দেহ-মনের জটিল সব অসুখ-বিসুখের সাথে এবং আরও নানান রকম রিপুর দাসত্ব করতে করতে বাধ্যগত মৃত্যু বরণ করি।
অথচ আমরা মানুষ প্রত্যেকে যদি নিয়মিত একটু নিজেকে পড়তাম। তাহলে নিশ্চিত যে আমরা আলোকিত হতে পারতাম।
পারতাম পৃথিবীর সৃষ্টি রহস্যর গন্ধ উপলব্ধি করতে। আমরা সৃষ্টি রহস্যের অতলে ডুবতে পারলে এক আশ্চর্য পৃথিবীর সন্ধান পেতাম। আমরা আমাদের রিপুগুলোর উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারতাম। পারতাম মানুষ জন্মের প্রকৃত স্বাদ আস্বাদন করতে।
আসুন আমরা চেষ্টা করি। আসুন চেষ্টা করি আমরা প্রত্যেকে আমাদের নিজেকে পড়তে এবং নিজের কৃতকর্মগুলোকে সংশোধন করতে। আসুন শুধু পৃথিবীর কাছে নয় নিজের কাছে নিজে পরিশুদ্ধ হই। আসুন আমরা প্রকৃত অর্থে মানুষ হই।
বেঁচে থাকুক প্রতিটি মানুষ এক জন্মেই জীবনের সেরাটা,
মানুষ তাঁর জন্মের প্রকৃত গন্ধটা অন্তত বুঝে নিক পুরোটা।
www.bbcsangbad24.com