কিশোরগঞ্জের তাড়াইলে অনলাইন জুয়ায় আসক্ত যুব সমাজ

Estimated read time 1 min read

ফেব্রুয়ারী,০৫,২০২৪

মাহবুবুর রহমান রানা,কিশোরগঞ্জ:

কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় মোবাইল অ্যাপসে জুয়া খেলায় মত্ত হয়ে উঠেছেন কিশোর-যুবকরা। শুধু কিশোর কিংবা যুব সমাজই নয় ক্ষেত্র বিশেষে বয়স্ক লোকেরাও জড়িয়ে পড়ছেন এমন বিধ্বংসী খেলার নেশায়। এতে যেমন সামাজিক অবক্ষয় ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করছে তেমনি অর্থনৈতিকভাবেও অনেক পরিবার হচ্ছে সর্বশান্ত। সমাজ ও পরিবারে বাড়ছে অশান্তি, অভিভাবক ও সচেতন মহলে ক্রমশ বাড়ছে উদ্বেগ।

অনুসন্ধানে জানা যায়, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহার করে এ ধরণের জুয়ায় অংশগ্রহণ করেন জুয়াড়িরা। বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহার করেন তারা। সবগুলো অ্যাপকে এক সাথে বলা হয় বেটিং সাইট। এসব অ্যাপ রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে পরিচালিত হয়ে থাকে। 

নির্ধারিত অ্যাপে খেলায় অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক ব্যক্তির নামে কিংবা পরিচিত অন্য ব্যক্তির নামে একটি একাউন্ট খুলতে হয়। এই একাউন্টে কিনতে হয় সরকারি অনুমোদনহীন ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা বা ক্রিপ্টো কারেন্সি। এজন্য ওই ব্যক্তিকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ‘এজেন্ট’ নামধারী কথিপয় দালাল চক্রের ব্যক্তিকে পরিশোধ করতে হয় দেশীয় টাকা। যে পরিমাণ টাকা এজেন্টকে পরিশোধ করা হবে সে অনুপাতে ক্রিপ্টো কারেন্সি দেয়া হবে জুয়াড়ি ব্যক্তিকে। 

টাকাগুলো লেনদেন করতে সাধারণত ব্যবহার করা হয় বিকাশ, রকেট ও নগদ নামের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা। তবে এ অঞ্চলে নগদের ব্যবহার হয় মাত্রাতিরিক্ত বেশি। এসব টাকার বেশির ভাগ অংশই চলে যায় যে দেশ থেকে অ্যাপটি পরিচালিত হয় সেই দেশে। এভাবেই অত্যাধুনিক ফর্মুলায় সকলের চোখের সামনে দিয়েই প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা চলে যাচ্ছে বিদেশে। 

শুধু যে তাড়াইল উপজেলাতেই এমন হচ্ছে তা কিন্তু নয়, সমস্ত দেশেরই একই অবস্থা। জুয়ার বিভিন্ন অ্যাপ থাকলেও তাড়াইলে বেটিং সাইট অ্যাপস ব্যবহার হয় খুব বেশি। ফুটবল, ভলিবল, ক্রিকেট, তীর, লুডু, বিমান, ক্যারামসহ এমন কোনো খেলা নেই যা এই অ্যাপে খেলা যায় না। বিভিন্ন লীগ নিয়েও বাজি হয়ে থাকে এই অ্যাপে।

উপজেলার সদর বাজার সহ বিভিন্ন ইউনিয়নের বাজার  ও খেলার মাঠে বসে এমন ভয়ঙ্কর খেলায় মেতে উঠেন তরুণরা। 

উপজেলার বিভিন্ন স্থানের পয়েন্টগুলোর চায়ের দোকানে, সিএনজি-লেগুনায়, খেলার মাঠের কোণে এমনকি রাস্তার পাশে বসে আড্ডা দেয়া ছলে এসব খেলা খেলে থাকেন জুয়াড়িরা। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক জুয়াড়ি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে খেলি। হারতে হারতে জীবনটা বরবাদ করে ফেলেছি। একবার জিতলে একমাস দুইমাস যায় হারতে হারতে। এটা একটা নেশার মতো। এসব খেলায় কোনো লাভ নেই। নিঃস্ব হয়ে অনেকে ঘরবাড়ি এমনকি এলাকা ছাড়া হয়েছেন।

বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের তাড়াইল উপজেলা শাখার সভাপতি, মুকুট রঞ্জন দাস বলেন, যে হারে সমাজে অনলাইন জুয়া বাড়ছে তাতে আমরা ক্রমশ উদ্বিগ্ন হচ্ছি। একটা ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে সমাজ। এ থেকে আমাদের বেড়িয়ে আসতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি আমাদেরও দায়িত্ব পালন করতে হবে। 

তাড়াইল থানার ওসি মো. মনসুর আলী আরিফ বলেন, এটা এমন একটি খেলা যা জুয়াড়িরা মোবাইলে খেলে থাকেন। দেখে বুঝার উপায় নাই যে এই ব্যক্তিই জুয়া খেলছেন। তবে আমরা বসে নেই। প্রযুক্তি ও কৌশল ব্যবহার করে আমাদের অভিজ্ঞ টিম মাঠে কাজ করছে। আমরা ইতোমধ্যে অভিযান করে একাধিক জুয়াড়িকে এর আগে গ্রেফতার করেছি। আমাদের কাজ চলমান আছে। শুধু আমাদের কাজ করলে হবে না, সাধারণ মানুষ আমাদেরকে সহযোগিতা করতে হবে। 

www.bbcsangbad24.com

আরও দেখুন আমাদের সাথে......

More From Author