ফেব্রুয়ারী,২৭,২০২৪
নিজস্ব প্রতিবেদক
এই বইয়ের একটি শিক্ষণীয় গল্প আপনার সোনামণিকে পড়তে দিন, পড়ে শোনান।
“খাবার স্যালাইন খেতেই হবে,
বমি ও ডায়রিয়া হয় যদি তবে।”
শাহজাইন এর বয়স সাত বছর। একদিন তার স্কুল থেকে তার মাকে ফোন করে জানানো হলো স্কুলে সে প্রচুর বমি করছে। তাকে যেন তাড়াতাড়ি তার মা বাসায় নিয়ে আসে।
ফোন পেয়ে সাথে সাথে তার মা তাকে বাসায় নিয়ে এলো। প্রথমে কাপড় চেঞ্জ করে তার হাতমুখ ও মাথা ধুইয়ে গা মুছিয়ে দিলো তার মা। কিন্তু তার বমি বন্ধ হলো না। এবং বাসায় ফেরার পর থেকে তার ডায়রিয়া শুরু হয়ে গেল।
তার মা শাহজাইনের রেগুলার ডাক্তারের সাথে ফোনে পরামর্শ নিয়ে তাকে বমির ওষুধ খাইয়ে দিলো এবং খাবার স্যালাইন খাওয়ানোর জন্য খুব চেষ্টা করতে লাগল। কিন্তু কিছুতেই সে খাবার স্যালাইন খেলো না। এদিকে সারাদিন বমি ও ডায়রিয়ার কারণে আস্তে আস্তে শাহজাইনের শরীর খুব দুর্বল হয়ে পড়ল।
রাতে শাহজাইনের বাবা বাসায় এসে ছেলের অবস্থা খারাপ দেখে তাকে হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে দিলো। কারণ সারাদিন বমি ও পাতলা পায়খানা হওয়ায় শাহজাইনের শরীরে মারাত্মকভাবে পানিশূন্যতা দেখা দিয়েছে। তাকে বুঝিয়ে বুঝিয়ে কোনোভাবেই হাতে ক্যানোলা করে স্যালাইন পুষ করতে পারছে না। সে ইনজেকশন খুব ভয় পায়। এক পর্যায়ে কয়েকজন নার্স মিলে তার হাত-পা শক্ত করে ধরে তার হাতে ক্যানোলা করে স্যালাইন পুশ করল। সাথে তাকে বমির ইনজেকশনও দেওয়া হলো। স্যালাইন চলছে তার। কিন্তু ছোটো বাচ্চা তাই সে কিছুতেই চুপচাপ শুয়ে থাকছে না। অতিরিক্ত নড়াচড়া করায় তার ক্যানোলা দিয়ে ব্লাড চলে আসছিল বার বার। বারো ঘন্টা যাওয়ার পরে ডাক্তার বলল শাহজাইনের মুখেও যেন একটু একটু করে খাবার স্যালাইন খাওয়ানো হয়। কিন্তু সে কিছুতেই খাবার স্যালাইন খাচ্ছে না। কারণ খাবার স্যালাইন তার একেবারেই পছন্দ না।
যেহেতু বমি ও ডায়রিয়া হওয়ার পরে সে খাবার স্যালাইন না খাওয়ায় তার শরীর মারাত্মক পানি শূন্য হয়ে গেছে। তাই তার জন্য স্যালাইনটা খুবই দরকার এখন। যদি সে মুখে খাবার স্যালাইন ও কিছু খাবার খেতে পারে তাহলে তার হাতের স্যালাইন খুলে দেওয়া হবে। কিন্তু তাকে কোনোভাবেই খাবার স্যালাইন খাওয়ানো যাচ্ছে না।
এভাবেই সারারাত কাটল তার হাতে স্যালাইন সহ। তার বাবা ও মা সারারাত তার পাশে পর্যায়ক্রমে স্যালাইনের হাত ধরে বসে রইল।
পরবর্তী দিন দুপুর পেরিয়ে সন্ধ্যা। শাহজাইনের শরীর কিছুটা ভালো। বমি কমেছে ডায়রিয়াও হচ্ছে তবে আগের চেয়ে কিছুটা কম। শরীর কিছুটা ভালো হতেই শাহজাইন বিছানা থেকে নেমে দৌড়াদৌড়ি শুরু করেছে। সে কোনোভাবেই তার হাতে স্যালাইন হাতে রাখতে চাচ্ছে না।
তার বাবা-মা ডাক্তারকে জানাল যে শাহজাইন সকাল থেকে মুখে একটু একটু অন্যন্য খাবার খাচ্ছে। কিন্তু তাকে কোনোভাবেই খাবার স্যালাইন মুখে খাওয়ানো যাচ্ছে না। সে খাবে না। ডাক্তার জানিয়ে দিলো তাকে বার বার করে মুখে খাবার স্যালাইন খাওয়ানো গেলে আজকেই হাতের স্যালাইন খুলে দিতে পারবে। কিন্তু সে তো কোনোভাবেই খাবে না স্যালাইন।
এদিকে হাতের স্যালাইনও খুলে ফেলার জন্য কান্না করছে।
বিকেলে শাহজাইনের দাদি হাসপাতালে এসে সবকিছু শুনল। শাহজাইন তো তার দাদিকে পেয়ে কান্না আরও বাড়িয়ে দিলো। দাদির কাছে স্যালাইন খুলে দেওয়ার আবদার করতে লাগল। এক পর্যায়ে তার দাদি তাকে বলল,
—দাদু ভাই আমি ডাক্তারকে বলে তোমার হাতের স্যালাইন খুলে দিতে পারব। যদি তুমি খাবার স্যালাইন গ্লাসে চুমুক দিয়ে খাও।
দাদির কথা শুনে সে আবার কান্না শুরু করল।
তখন তার দাদি তাকে আদর করে বুঝিয়ে বলল। মুখে স্যালাইন না খেলে হাতে স্যালাইন চলবে। আর এভাবেই অনেকদিন তাকে হাসপাতালে থাকতে হবে হাতে স্যালাইন নিয়ে। আর যদি গ্লাসে করে খাবার স্যালাইন খায় তাহলে হাতের ইনজেকশন খুলে দিবে। সে তাহলে এখন ইচ্ছে মতো খেলতে পারবে আর তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে বাসায় যেতে পারবে।
কিছুক্ষণ দাদি ও নাতির এরকম অনেক কথা চলল। এক সময় জারিফ তার দাদির কথায় গ্লাসে করে ঢকঢক করে খাবার স্যালাইন খেতে লাগল। সেই রাতেই ডাক্তার পারমিশন দিলো তার হাতের স্যালাইন ও ক্যানোলা খুলে দিতে।
এরপর থেকে শাহজাইন ডাক্তারের নির্দেশ মতো নির্ধারিত পরিমাণ খাবার স্যালাইন গ্লাসে করে চুমুক দিয়ে খেতে লাগল। ওষুধ ও খাবার স্যালাইন খেয়ে ডাক্তারের চিকিৎসায় সে বেশ সুস্থ হয়ে উঠতে থাকলে একদিন পরেই তাকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দিয়ে দেয়।
বাসায় ফিরে শাহজাইন নিজেই তার মা ও দাদির কাছে খাবার স্যালাইন চেয়ে চেয়ে খায় এবং সম্পুর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠে কিছুদিনের মধ্যে।
এরপর যতবারই শাহজাইনের বমি বা ডায়রিয়া হয়েছে। সে নিয়মিত খাবার স্যালাইন খেয়েছে। তাই তার শরীরে আর কখনই বড়ো রকমের পানিশূন্যতা হয়নি। তাকে আর ডায়রিয়ার জন্য হাসপাতালে গিয়ে হাত ফুটো করে স্যালাইন ও ইনজেকশন দিতে হয়নি।
তাহলে সোনামণিরা আমরা শাহজাইনের জীবনের এই ঘটনা থেকে কী শিখলাম!
আমরা শিখলাম যে, আমাদের বমি বা ডায়রিয়া হলে সাথে সাথে আমাদেরকে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার স্যালাইন খেতে হবে। ভালো না লাগলেও খেতে হবে। বমি বা ডায়রিয়ায় আমাদের শরীর থেকে যে পরিমাণ পানি চলে যাবে। তা সাথে সাথে খাবার স্যালাইন খেয়ে খেয়ে পূরণ করতে হবে। নয়তো আমাদের শরীর পানিশূন্য হয়ে আমাদের মৃত্যুও ঘটতে পারে।
এসো সোনামণিরা আমরা সকলে মিলে শপথ নেই,
হয় যদি আমাদের ডায়রিয়া বা বমি,
এই সময় খাবার স্যালাইন হোক আমাদের খাবারের হবি।
ডায়রিয়া হলে সাথে সাথে খাব খাবার স্যালাইন গুলে,
দেবো না শরীর পানিশূন্য হতে কোনো ভুলে।
খাবার স্যালাইন হলো ডায়রিয়া ও বমির চিকিৎসার মূলে,
তাই ডায়রিয়া হলে খাবার স্যালাইন খাব দুলে দুলে।
শিক্ষামূলক নোট—-
শিশুদের সুস্বাস্থ্যের বিষয়ে অবশ্যই আমরা নিজেরা সচেতন হব এবং শিশুদেরকে সচেতন করতে অনুপ্রেরণামূলক গল্প কথায় সকল নিয়ম কানুন শেখাব।
www.bbcsangbad24.com