মে,১২,২০২৪
“নাজনীন নাহার”
মা দিবস
পৃথিবী পূর্ণ করা পরিতৃপ্তির পালকে মোড়ানো সুখের স্মৃতি, আনন্দ, ভালোলাগা, ভালোবাসার শব্দ, উচ্চারণ, প্রেম, মোহ, মায়া ও নির্ভরতার নাম মা।
মা আমার প্রথম চেনা পৃথিবী।
মা আমার প্রথম চেনা মানুষ। আমার আদর্শ। আমার শিক্ষক। মা আমার পাঠশালা।
আমার সিংহভাগ শিক্ষায় আমার মা।
আমার পরিশীলন, পরিবর্ধন, গঠন, মনন ও আচরণ আমার মা।
পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি ভয়ও ছিল আমার মা’কে।
সবচেয়ে বেশি শাসনে ছিলাম মায়ের। চোখ তুলে তাকালেই ভয়ে মিইয়ে যেতাম। আর এই ভয় থেকেই শিখেছি জীবনে চলার পথে ভুলগুলো কম করার অনুশীলন।
আমার মা আমার বন্ধু ছিলেন।
সব গোপন কথা মা’কেই বলতাম।
সবচেয়ে আমায় ভালোভাবে বুঝতে পারতেন আমার মা।
প্রশ্রয়টাও মায়ের কাছেই বেশি পেতাম।
আবদার, আপত্তি, খুনসুটি সব ছিল মায়ের আঁচলেই।
আমার সব কষ্টগুলো মা মুখ দেখেই বুঝে নিতেন।
সকলের মায়ের মতো আমার মা-ও পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মা ছিলেন।
আহা!
আমার পৃথিবীর সবচেয়ে বড়ো আশ্রয় ছিলেন আমার মা।
ছোটোবেলায় আমার কত বায়না মায়ের কোলে থাকার জন্য। একটু গা ঘেঁষে হাঁটার জন্য। একটু কোল জুড়ে বসার জন্য।
পেটে ব্যথা, দাঁতে ব্যথার বায়নায় মায়ের কোলের দখল নেয়ার জন্য, মায়ের পিছু হেঁটে মায়ের গায়ের গন্ধটা নেয়ার জন্য কত কত বাহানা করতাম আমি।
শেষ বয়সে সেই মা আমার শিশু হয়ে গেলেন। শিশুর মতো বিছানায় পরে রইলেন। মুখের কথা হারিয়ে গেল মায়ের। চোখে চেয়ে সব বোঝাতেন মা।
মা আমার শিশুটি হয়েই রইলেন। কেমন বুকে আগলে নিয়েছিলাম মা’কে।
মুখে তুলে খাবার দিলাম। পটি-হিসু সব সাফ করতাম।কোলের মধ্যে নিয়ে বসে থাকতাম। বুকের মধ্যে চেপে ধরতাম।
কথা শোনার বায়না করতাম।
কত কত কত কাঁদতাম।
মা আমার ফিরে আসুক সুস্থ জীবনে ফিরে আসুক।
মা শুধু একটি বার আর একটি বার আমায় নাম ধরে ডাকুক।
মা আমার একটু হাসুক।
তিন তিনটা মাস হাসপাতালে। আই সি ইউ। কত কত কত কষ্ট মায়ের। ঠিক আমার চোখের সামনে। হাতের উপর। আহা সে কী কষ্ট মায়ের!
নিথর পাথর দাড়িয়ে দেখতাম। অসহায় চোখে তাকিয়ে থাকতাম।
জমের সাথে নিত্য লড়াই। মা’কে শুধু আমাদের চাই।
বিছানায় মা’য়ের অচল শরীর। চোখে কভু বেশ সতেজ। আবার কেমন ভাবলেশহীন মা আমার।
কখনো একটু সুস্থ সুস্থ। আবার কখনো এই বুজি চলে যায়! প্রহরী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম। না ঘুমিয়ে রাতের পর রাত মায়ের ক্যানোলা করা হাতটি ধরে বসে থাকতাম।
নাকের টিউব, হাতের সেলাইন যখন তখন শিশুর বুঝে খুলে ফেলতো মা আমার।
একটা হাত মায়ের সচল ছিল।
দু’টো হাতেই মেহেদী দিতো। হাসপাতালের বেডে শোয়া মায়ের হাতে মেহেদী দিলাম।
মা আমার শিশুর মতো হাতটি নেড়ে দেখতে থাকল।
রাতের পর রাত জেগে মায়ের কাছে লেপটে ছিলাম।
স্রষ্টার কাছে কত মিনতি, কত আকুতি ভাই-বোনেতে আমরা সবাই।
মা আমার বেঁচে থাকুক। সেরে উঠুক।
না হলে মা এমনিই বাঁচুক। থাকুক বেঁচে শিশু হয়েই।তা-ও তো মা’কে দেখতে পাব। মায়া পাব। আদর পাব।
মা আমার একটা হাতেই কত কত আদর দিতেন।
মাথায় কেমন হাত বুলাতেন।
বুকের মধ্যে টেনে নিতেন।
শিশুর মতো হাসিতে মা আমাদের মন ভরাতেন।
তাতেও আমরা ভালোই ছিলাম। আমরা তাতেই ভীষণ খুশি। মা আমার এভাবেই থাকুক বেঁচে। মা’কে তাও হারাতে চাইনি। আমার শেষপৃথিবী মায়ার আদর আর দোয়ার বহর মা-ই ছিল।
তবুও মা চলে গেলেন। চলে গেলেন পৃথিবী ছেড়ে। আমাদেরকে একলা করে। একলা রেখে। শূন্য করে ঘর বাড়িটা। মা আমার চলেই গেলেন। চলেই গেলেন পরপারে।
চলে গেলেন বুকের ভেতর থেকে থেকেই। চলে গেলেন আমার হাতের উপর।
আমি কেমন অবাক চোখে তাকিয়ে রইলাম মায়ের মুখে। মায়ের সেই নিথর ঠোঁটে।
মাথার উপর মনিটরে।
বুকের উপর মাথা রেখে কত খুঁজলাম নিঃশ্বাস মায়ের!
আর পেলাম না।
মা’কে আমার আর পেলাম না।
মা আমার নাই হয়ে গেল।
মুখটা সবাই ঢেকে দিল।
সেই তো মা’কে শেষ দেখাটা।
সেই যে আমার আমার মা টা।
কাফন হলো, দাফন হলো।
আসেপাশে ঠিকই ছিলাম। খতমে, দোয়ায় মগ্ন থেকে নিজেকে কেমন ভুলিয়ে নিলাম।
সবাই এসে বলল আমায়।
শেষবারের মতো দেখো মা’কে।
আমি আর দেখলাম না মা।
মা গো আপনারওই নিথর মুখটা।
আমার চোখে লেপটে থাকুক আজীবনের সজীব মা-টা।
কাফন ঢাকা মুখটা মায়ের আমার চোখের স্মৃতির পটে,
না রেখে মা ভালোই হলো।
এখনো আপনি না থেকে মা।
আমার কোলে ওমনি আছেন।
আদর আদর মায়া মায়া।
আমার মায়ের মায়ার কায়া।
পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মায়া।
মাগো আপনি ভালো থাকুন।।আল্লাহ আপনায় রহম করুন। ক্ষমা করুন। জান্নাতুল ফেরদৌসের সুখে রাখুন। নিত্য দেয়া প্রার্থনাতে আপনাকে মাগো সাথেই রাখি।
তবুও মা আপনাকে ছাড়া কেমন করে ভালো থাকি!
আজ শুধু নয় সারাবেলা ঘুরে ফিরে আপনাকে মাগো মনে করি। কাঁদি-হাসি কাজে ডুবি। আপনাকে মাগো মনে করি। আপনাকে ছাড়া শূন্য শূন্য এইতো মা আজ বেঁচে আছি। একলা ভীষণ, একলা হয়ে বেঁচে থাকি মাগো আমি।
রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বা ইয়ানি সাগিরা।
[পৃথিবীর সব মা’কে গভীর শ্রদ্ধার সাথে মা দিবসের শুভেচ্ছা আর ভালোবাসা
আর আকুল আবেদন যাদের মা এখনো বেঁচে আছেন তারা মা’কে কোয়ালিটি টাইম দিন। যত্ন নিন।ভালোবাসুন সম্মান আর শ্রদ্ধায়। মা কিন্তু থাকবে না চিরকাল। প্লিজ ]
www.bbcsangbad24.com