“শ্রদ্ধেয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি”

Estimated read time 1 min read


মে,২৫,২০২৪


“নাজনীন নাহার”


হে প্রিয় কবি!
হে শ্রদ্ধাভাজন গুণীজন!
প্রথমেই আমার সালাম ও বিনম্র শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। আমার বাল্যশিক্ষার পর্ব থেকেই আমি আপনাকে চিনতে শুরু করেছিলাম। আপনার লেখা ছড়া, কবিতা ও আপনার জীবন গল্পে আপনার কিয়দংশ আপনাকে চিনেছি আমার মায়ের এবং শিক্ষকদের কাছ থেকে। তারপর বইপত্র এবং বিভিন্ন সোর্স থেকে।

কখনো আপনি “বাবুদের তালপুকুরে”। কখনো আপনি “আমি বিদ্রোহী রণক্লান্ত “। আপনাকে এভাবেই জেনেছি বাল্যকাল থেকে কৈশোর। রেডিও, টিভি, ক্যসেট প্লেয়ারে যখন আপনার লেখা ও সুরের নজরুলগীতি শুনতাম মায়ের সঙ্গে বসে। তখন আপনার লেখা সকল শব্দ ও বাক্যের অর্থ ঠিকঠাক বুঝতে না পারলেও সেই সুর বড্ড টানত আমায়।
“আলগা করো গো খোঁপার বাঁধন… ” এই গানসহ আপনার নানান গানের সুরে মুগ্ধ হতাম আমি।

তবে “আলগা করো গো খোঁপার বাঁধন……” এই গানের অনুভবে ডুবলাম যখন আমি মায়ের শাড়ি পরে প্রথমবার স্কুলের সাংস্কৃতিক আয়োজনে যাই। মায়ের হাতে গুছিয়ে পরিয়ে দেওয়া শাড়ির সঙ্গে বড়োদের মতো পরিপাটি খোঁপা বাঁধা রমণীসুলভ আমার উপস্থিতিতে কোনো এক অপরিচিত তরুণের কণ্ঠে নিজের কানের কাছে গুনগুনে ” আলগা করো গো খোঁপার বাঁধন…..” গানটি অন্যরকম মাত্রা পেল।

“খেলিছ এ বিশ্ব লয়ে বিরাট শিশুর আনমনে খেলিছ…….” কী গভীর অনুভব আপনার। কী শক্তিশালী উপলব্ধি এবং কী ভীষণ দুঃসাহস আপনার! আমি যতবার শুনি ততবারই বিস্মিত হই। স্রষ্টা এবং তাঁর সৃষ্টির রহস্যময়তায় নিজের তুচ্ছ জীবনের অবস্থান খুঁজি। যদিও এই গানের কথাগুলো নিয়ে বহু বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন অনেকে। তবুও আমি আপনার উপলব্ধির সত্যদর্শন এবং প্রকাশের সাহসে বিস্মিত ও মুগ্ধ প্রিয় কবি।

আপনার লেখা ও সুর করা হামদ, নাত আমাদেরকে স্রষ্টার মহিমার সাথে এবং নবীর মাহাত্ম্যের সাথে আরও নিবিড়ভাবে সংযুক্ত করে।

“ও মন রমজানেরও রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ…….” আনন্দের সঙ্গে মানবিক আহ্বান ও সুবার্তা প্রতিটি মানুষের মনকে মানবিক অনুভবে সমৃদ্ধ করে সবসময় আপনার এই মহান সৃষ্টি।

এরপরও আমি আপনার সৃজনের নানান রূপে ও রঙে চিনিছি, জেনেছি আপনাকে। চিনতে চেষ্টা করেছি আপনার ক্ষুধা, দারিদ্র, প্রেম, বিরহ, বিদ্রোহ, সময় ও আপনার জীবনের খণ্ডংশ। আপনার অজস্র সৃষ্টি সাহিত্য পড়লাম। পড়লাম কবিতা ও চিঠি। আপনার প্রিয় ফজিলাতুন্নেছাকে লেখা এবং তাঁকে উদ্দেশ করে লেখা আপনার বন্ধু কাজী মোতাহার হোসেনকে লেখা চিঠির প্রেম-বিরহে পড়লাম আমি।

“অনেক পেয়েছি বন্ধু। লাভের বোঝা আমাকেও ছাপিয়ে তুলেছে। এবার শোধার পালা……” আহা আপনার বন্ধু কাজী মোতাহার হোসেনকে লেখা চিঠির এই কথাগুলোসহ নানান উপলব্ধি আমাকে আমার জীবনের বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে এক বিদগ্ধ বোধে তাড়িত করে, করে অনুপ্রাণিত এবং স্থীর।

আপনার সৃষ্টি, আপনার গুণগান করে শেষ করার মতো না। আপনার ছড়া, কবিতা, শিশুসাহিত্য, গল্প, উপন্যাস, গীতিনাট্য, প্রবন্ধ বাংলা সাহিত্যকে যেভাবে সমৃদ্ধ করেছে। সেই তুলনায় আপনি অনন্য সর্বকালেই। আপনার জন্য আজীবনের শ্রদ্ধা ও দোয়া। আপনার পরকালের জীবন রাব্বুল আলামিন বেহেশতের সুখে রাখুন।

আপনার সৃষ্টির মাঝে আপনি বেঁচে আছেন। আপনি বেঁচে থাকবেন অনন্তকাল হে শ্রদ্ধেয় গুণীজন। বিনম্র শ্রদ্ধা আপনার জন্য।

“আমার আপনার চেয়ে আপন যে জন,
খুঁজি তারে আমি আপনায়…….”

আহা এই খোঁজের বুঝি শেষ নেই কারও কোনোকালে! আপনার পথ ধরে আমরাও খুঁজি। আমরাও বুঝি আমাদের সকলের জীবন বোধ।

প্রিয় কবি!
আমি যতটুকু বুঝি তাতে আমার অনুভূতি বলে,
‘মানুষ মূলত তাঁর বোধের উপলব্ধি ও বিস্তারে বাঁচে।’ আপনিও সেভাবেই বেঁচেছেন এবং আপনার জীবনে পূর্ণ করে রেখে গেছেন আপনার সৃজন।

“আমি চিরতরে দূরে চলে যাব,
আমারে দেবো না ভুলিতে……. “

না শ্রদ্ধের কবি,
আপনি দূরে যাননি। আপনি আছেন এবং থাকবেন আমাদের মন, মগজ এবং আত্মায়। থাকবেন আমাদের সৃষ্টির আনন্দে মিশে।
আপনাকে ভুলিনি আমরা। ভুলবে না পৃথিবী আপনাকে। আপনি আপনার সৃষ্টিতে আছেন এবং থাকবেন অম্লান।
থাকবেন সকল অন্তরে হাজার কোটি বছর। থাকবেন শ্রদ্ধায় আজীবন।

www.bbcsangbad24.com

আরও দেখুন আমাদের সাথে......

More From Author