কিশোরগঞ্জ ছাত্রলীগ সভাপতিসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফি মামলা

Estimated read time 1 min read

জুন ২৪,২০২৪

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি

কিশোরগঞ্জের ১ নম্বর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. আশিকুর রহমানের আদালতে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতিসহ তিনজনের বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা হয়েছে।

রবিবার (২৩ জুন) দুপুরে এই মামলা করা হয়। ২৩ বছর বয়সী ওই ছাত্রী শহরের একটি সরকারি কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। কিশোরগঞ্জের ১ নম্বর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বেঞ্চ সহকারী শিখা রাণী দাস এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, মামলাটি এফআইআরের জন্য সদর থানার ওসিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি নাজমুল হোসেন হীরাকে। এছাড়া হীরার দুই মামা, যথাক্রমে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমন ও তার বড় ভাই মোশারফ হোসেন মোল্লা বাবুলকে আসামি করা হয়েছে। তারা সবাই শহরের বয়লা তারাপাশা এলাকার বাসিন্দা।

মামলার এজাহারসূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালে দক্ষিণ কোরিয়া প্রবাসী এক যুবকের সঙ্গে বিয়ে হয় এই তরুণীর। দাম্পত্য জীবনে বনিবনা না হওয়ায় বিয়ের একমাস পরই তাদের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় এবং তিনি বাপের বাড়িতে চলে আসেন। সেখান থেকে ফের কলেজে যাওয়া শুরু করেন।

কলেজে যাওয়ার পথে প্রায়ই তাকে প্রেম নিবেদন করতেন নাজমুল হোসেন হীরা। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে চলে শারীরিক সম্পর্ক। এসময় নাজমুল হীরা কৌশলে তাদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের কিছু স্থিরচিত্র ও ভিডিও ধারণ করে রাখেন।

পরে বিষয়টি হীরার মামা আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমন ও মোশাররফ হোসেন মোল্লা বাবুলকে জানান মেয়েটি। তখন সুমন ও বাবুল মেয়েটিকে হুমকি দিয়ে বলেন- তাদের ভাগ্নের সঙ্গে বেশি বাড়াবাড়ি করলে শহরে থাকতে দেবে না।

এভাবে ভয়-ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে মেয়েটিকে বেশ কিছুদিন থামিয়ে রাখেন তারা। পরে বাধ্য হয়েই নাজমুল হীরার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক বজায় রাখতে হয় মেয়েটি। এভাবে টানা এক মাস অতিক্রান্ত হলে আবারও হীরাকে বিয়ের জন্য চাপ দেন তিনি। এক পর্যায়ে ২০২৩ সালের ৮ জুন গোপনে কাজী ডেকে বিয়েও করেন তারা। বিয়ের পরে তিনি জানতে পারেন, নাজমুল হীরা বিবাহিত; বাড়িতে তার স্ত্রী রয়েছে। বিষয়টি জানার পর মৌখিকভাবে হীরাকে তালাক দিয়ে চলে আসেন তিনি।

পরবর্তীতে হীরা আবারও যোগাযোগ স্থাপন করে শারীরিক সম্পর্ক না রাখলে তাদের অন্তরঙ্গ মুহেূর্তের ভিডিও ভাইরাল করে দেয়ার হুমকি দেন। এভাবে মেয়েটিকে ব্ল্যাকমেইল করে দুইবারে পাঁচ লাখ টাকা আদায় করেন তিনি। এই টাকা দিয়ে একটি মোটরসাইকেল কেনেন তিনি।

হীরার পর একই পন্থা অবলম্বন করেন তার মামা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমন। তিনিও ভয় দেখিয়ে মেয়েটির কাছ থেকে আদায় করে একটি আইফোন ও একটি স্যামসাংয়ের স্মার্টফোন কেনেন। সুমনের বড় ভাই মোশারফ হোসেন মোল্লা বাবুল আদায় করেন নগদ তিন লাখ টাকা। তিনিও কেনেন একটি পালসার মোটরসাইকেল।

এভাবে তাদের টাকা দিতে দিতে বর্তমানে তিনি নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন বলে এজাহারে বলা হয়েছে। তবে এত কিছুর পরও তাদের অন্তরঙ্গ মূহুর্তের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হয়।

মেয়েটির অভিযোগ, ‘নাজমুল হীরার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন এবং যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়ার কারণেই সে এমনটা করেছে। আর এক্ষেত্রে তাকে সহযোগিতা করেছেন তার মামা সুমন ও বাবুল।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাজমুল হোসেন হীরা বলেন, ‘যিনি মামলা করেছেন তিনি তার বিবাহিত স্ত্রী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটির বিষয়ে আমি নিজেও মামলা করেছি। সে মামলায় আমার স্ত্রী সাক্ষী। কিছু লোকের কুপরামর্শে সে হয়তো এমনটা করেছে।’

জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমন ঘটনাটিকে ‘ষড়যন্ত্র’ উল্লেখ করে বলেন, ‘আমার ভাগ্নে হীরার সঙ্গে মেয়েটি বিয়ে হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপত্তিকর ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার বিষয়ে ঢাকা সাইবার ট্রাইব্যুনালে হীরা বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছিল, কিন্তু এখন কী কারণে মেয়েটি ভাগ্নের বিষয় টেনে এনে বড় ভাইসহ আমাকে মামলার আসামি করেছে, সেটা আমার বোধগম্য হচ্ছে না।’

www.bbcsangbad24.com

আরও দেখুন আমাদের সাথে......

More From Author